নবম শ্রেণী ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বিংশ শতকের ইউরোপ প্রশ্ন উত্তর
নবম শ্রেণি ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বিংশ শতকের ইউরোেপ প্রশ্ন উত্তর / Suggestion
১) প্রশ্ন: রাশিয়ার শাসকদের কী উপাধি ছিল?
(A) সম্রাট
(B) কাইজার
(C) শাহ
(D) জার
উত্তর: (D) জার
২) প্রশ্ন: রাশিয়ার কোন বংশের রাজারা 'জার' উপাধি গ্রহণ করতেন?
(A) রোমানভ
(B) বুরবোঁ
(C) হ্যাপসবার্গ
(D) স্যাভয়
উত্তর: (A) রোমানভ।
৩) প্রশ্ন: কোন রুশ জার 'আধুনিক রাশিয়ার জনক' নামে পরিচিত?
(A) চতুর্থ আইভান
(B) মিখাইল রোমানভ
(C) পিটার দ্য গ্রেট
(D) দ্বিতীয় ক্যাথারিন
উত্তর: (C) পিটার দ্য গ্রেট।
৪) প্রশ্ন: 'উদারনৈতিক জার' নামে পরিচিত ছিলেন-
(A) দ্বিতীয় নিকোলাস
(B) প্রথম আলেকজাণ্ডার
(C) দ্বিতীয় আলেকজাণ্ডার
(D) প্রথম নিকোলাস
উত্তর: (B) প্রথম আলেকজাণ্ডার।
৫) প্রশ্ন: চোদ্দো দফা নীতি ঘোষণা করেছিলেন-
(A) উড্রো উইলসন
(B) লয়েড জর্জ
(C) ক্লিমেশো
(D) ভিত্তোরিও অর্লান্ডো
উত্তর: (A) উড্রো উইলসন
৬) প্রশ্ন: হিটলারের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল –
(A) 1920 খ্রিস্টাব্দে
(B) 1922 খ্রিস্টাব্দে
(C) 1923 খ্রিস্টাব্দে
(D) 1925 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: (D) 1925 খ্রিস্টাব্দে
৭) প্রশ্ন: আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে মিত্রপক্ষে যোগ দেয়-
(A) 1914 খ্রিস্টাব্দে
(B) 1915 খ্রিস্টাব্দে
(C) 1916 খ্রিস্টাব্দে
(D) 1917 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: (D) 1917 খ্রিস্টাব্দে
৮) প্রশ্ন: 'গমের যুদ্ধ' ঘোষণা করেন-
(A) উড্রো উইলসন
(B) রুজভেল্ট
(C) মুসোলিনি
(D) হিটলার
উত্তর: (C) মুসোলিনি।
৯) প্রশ্ন: ভাইমার প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়-
(A) জার্মানিতে
(B) প্রাশিয়ায়
(C) রাশিয়ায়
(D) পোল্যান্ডে
উত্তর: (A) জার্মানিতে।
১০) প্রশ্ন: স্পেনের গৃহযুদ্ধে বিদ্রোহী নেতা ছিলেন-
(A) কুই রোগা
(B) জেনারেল ফ্রাঙ্কো
(C) আজানা
(D) জামোরা
উত্তর: (B) জেনারেল ফ্রাঙ্কো।
১১) প্রশ্ন: স্পেনের গৃহযুদ্ধে জয়লাভ করেন-
(A) জেনারেল ফ্রাঙ্কো
(B) কুই রোগা
(C) আজানা
(D) জামোরা
উত্তর: (A) জেনারেল ফ্রাঙ্কো।
১২) প্রশ্ন: ত্রিশক্তি আঁতাত-এ রাশিয়া যোগ দেয়-
(A) 1904 খ্রিস্টাব্দে
(B) 1906 খ্রিস্টাব্দে
(C) 1907 খ্রিস্টাব্দে
(D) 1908 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: (C) 1907 খ্রিস্টাব্দে
১৩) প্রশ্ন: রক্তাক্ত রবিবার কবে ঘটেছিল?
(A) 1903 খ্রিস্টাব্দে
(B) 1904 খ্রিস্টাব্দে
(C) 1905 খ্রিস্টাব্দে
(D) 1906 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: (C) 1905 খ্রিস্টাব্দে
১৪) প্রশ্ন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়-
(A) 1913 খ্রিস্টাব্দে
(B) 1914 খ্রিস্টাব্দে
(C) 1915 খ্রিস্টাব্দে
(D) 1916 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: (B) 1914 খ্রিস্টাব্দে
১৫) প্রশ্ন: কার নেতৃত্বে রাশিয়ায় 'কালো সন্ত্রাসের রাজত্ব' শুরু হয়?
(A) রাসপুটিনের
(B) স্টোলিপিনের
(C) কাউন্ট উইটির
(D) ফাদার গ্যাপনের
উত্তর: (B) স্টোলিপিনের।
১৬) প্রশ্ন: লাল ফৌজ প্রতিষ্ঠা করেন-
(A) দ্বিতীয় নিকোলাস
(B) স্ট্যালিন
(C) লেনিন
(D) ট্রটস্কি
উত্তর: (D) ট্রটস্কি।
১৭) প্রশ্ন: বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হল-
(A) চেকোস্লাভাকিয়া
(B) পোল্যান্ড
(C) আমেরিকা
(D) সোভিয়েত রাশিয়া
উত্তর: (D) সোভিয়েত রাশিয়া।
১৮) প্রশ্ন: 'নতুন অর্থনৈতিক নীতি' ঘোষণা করেন-
(A) লেনিন
(B) স্ট্যালিন
(C) মলোটভ
(D) দ্বিতীয় নিকোলাস
উত্তর: (A) লেনিন।
১৯) প্রশ্ন: 'ফ্যাসেস' কথার অর্থ হল-
(A) সততা
(B) শক্তি
(C) নিয়মানুবর্তিতা
(D) শক্তি
উত্তর: (B) শক্তি।
২০) প্রশ্ন: নভেম্বর বিপ্লবের প্রধান নেতা ছিলেন-
(A) প্রিন্স লুভভ
(B) কেরেনস্কি
(C) লেনিন
(D) ট্রটস্কি
উত্তর: (B) লেনিন
২১) প্রশ্ন: জার্মানির সার অঞ্চলের কয়লা খনিগুলির উপর ফ্রান্সের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় –
(A) 15 বছরের জন্য
(B) 16 বছরের জন্য
(C) 17 বছরের জন্য
(D) 18 বছরের জন্য
উত্তর: (A) 15 বছরের জন্য
২২) প্রশ্ন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য গ্লাইফেন পরিকল্পনা করেছিল যে দেশ তা হল-
(A) অস্ট্রিয়া
(B) সার্বিয়া
(C) জার্মানি
(D) রাশিয়া
উত্তর: (C) জার্মানি
২৩) প্রশ্ন: 1915 খ্রিস্টাব্দে ট্যালেনবার্গের যুদ্ধে পরাজিত হয়-
(A) জার্মানি
(B) অস্ট্রিয়া
(C) সার্বিয়া
(D) রাশিয়া
উত্তর: (D) রাশিয়া
বহু বিকল্পিত প্রশ্নঃ/ MCQ
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর / Very Short Q&A
১) প্রশ্ন: বলশেভিক দলের নেতা কে ছিলেন?
উত্তর: লেনিন
২) প্রশ্ন: সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার আগে রাশিয়ায় কোন্ বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা ছিল?
উত্তর: রোমানভ বংশ
৩) প্রশ্ন: রাশিয়ায় সাম্যবাদী সরকারের প্রতিষ্ঠাতা কে?
উত্তর: লেনিন
৪) প্রশ্ন: কত খ্রিস্টাব্দে রুশ বিপ্লব হয়েছিল?
উত্তর: 1917 খ্রিস্টাব্দে
৫) প্রশ্ন: মুসোলিনির উপাধি কি ছিল?
উত্তর: ইলদ্যুচে
৬) প্রশ্ন: হিটলারের উপাধি কি ছিল?
উত্তর: ফ্যুয়েরার
৭) প্রশ্ন: মেই ক্যাম্প গ্রন্থটির রচয়িতা কে?
উত্তর: হিটলার
৮) প্রশ্ন: দুজন রুশ সাহিত্যিকের নাম লেখ।
উত্তর: গোর্গি ও তলস্তই
৯) প্রশ্ন: এপ্রিল থিসিস কে ঘোষণা করেন?
উত্তর: লেনিন (1917 খ্রিস্টাব্দে)
১০) প্রশ্ন: ফ্রেডরিখ ইবার্ট কে ছিলেন?
উত্তর: ফ্রেডরিখ ইবার্ট ছিলেন জার্মানির ভাইমার প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা।
১১) প্রশ্ন: সেরাজেভোর হত্যাকাণ্ড কে ঘটিয়েছিল?
উত্তর: ইউনিয়ন অব ডেথ নামক একটি সন্ত্রাসবাদী সংস্থার সদস্য প্রিন্সেপ সেরাজেভো হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল।
১২) প্রশ্ন: ত্রিশক্তি মৈত্রী বা ট্রিপল আঁতাঁত এর প্রধান সদস্য কারা ছিল?
উত্তর: ত্রিশক্তি মৈত্রী বা ট্রিপল আঁতাঁত এর প্রধান সদস্য ছিলেন ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এবং রাশিয়া।
১৩) প্রশ্ন: ত্রিশক্তি চুক্তি বা ট্রিপল এলায়েন্স এর প্রধান সদস্য কারা ছিল?
উত্তর: ত্রিশক্তি চুক্তি বা 'ট্রিপল এলায়েন্স এর প্রধান সদস্য জার্মানি, অস্ট্রিয়া এবং ইতালি।
১৪) প্রশ্ন: প্রাভদা কী?
উত্তর: প্রাভদা হল রাশিয়ার বলসেভিক দলের মুখপত্র।
১৫) প্রশ্ন: রাশিয়ায় কবে জারতন্ত্রের অবসান ঘটে?
উত্তর: ১৯১৭ সালের ১৩ই মার্চ রাশিয়ার জারতন্ত্রের অবসান ঘটে।
১৬) প্রশ্ন: নারোদনিক শব্দের অর্থ কি?
উত্তর: 'নারোদনিক' শব্দের অর্থ হল জনগণের আন্দোলন।
১৭) প্রশ্ন: লেনিনের পুরো নাম কি ছিল?
উত্তর: রাশিয়ার বলসেভিক আন্দোলনের নেতা লেনিনের পুরো নাম ছিল ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিন
১৮) প্রশ্ন: "সংযুক্ত সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র” রূপে রাশিয়া কবে সংগঠিত হয়?
উত্তর: "সংযুক্ত সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র” রূপে রাশিয়া সংগঠিত হয় 1924 খ্রিস্টাব্দে।
১৯) প্রশ্ন: সেন্ট জার্মায়েন-এর সন্ধি কার সঙ্গে সম্পাদিত হয়?
উত্তর: অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির সঙ্গে এই সন্ধি সম্পাদিত হয়।
২০) প্রশ্ন: কমিন্টার্ন কী?
উত্তর: 1919 খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে মস্কোতে তৃতীয় আন্তর্জাতিক বা কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল গঠিত হয়। এই সংগঠন কমিন্টার্ন নামে পরিচিত।
২১) প্রশ্ন: ভাইমার প্রজাতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন?
উত্তর: ভাইমার প্রজাতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন ফ্রেডারিক ইবার্ট।
২২) প্রশ্ন: মিত্রপক্ষের সঙ্গে জার্মানির সম্পাদিত চুক্তির নাম কী?
উত্তর: মিত্রপক্ষের সঙ্গে জার্মানির সম্পাদিত চুক্তির নাম হল ভার্সাই সন্ধি।
২৩) প্রশ্ন: জাতিসংঘের প্রথম মহাসচিব কে ছিলেন?
উত্তর: জাতিসংঘের প্রথম মহাসচিব ছিলেন স্যার এরিক ড্রামন্ড।
২৪) প্রশ্ন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে জার্মানির সম্রাট কে ছিলেন?
উত্তর: প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে জার্মানির সম্রাট ছিলেন কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম।
২৫) প্রশ্ন: জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয় বা সদর দপ্তর কোথায় ছিল?
উত্তর: জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয় বা সদর দপ্তর ছিল জেনেভা শহরে।
২৬) প্রশ্ন: কে, কবে 'বাইবেল সোসাইটি' প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর: ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দে, রাশিয়ার জার প্রথম আলেকজান্ডার বাইবেল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।
২৭) প্রশ্ন: 'গেস্টাপো' কী?
উত্তর: জার্মানির নাৎসি বাহিনীর গুপ্ত পুলিশবাহিনীকে বলা হত 'গেস্টপো'।
২৮) প্রশ্ন: ইতালিতে ফ্যাসিস্টদলের একনায়কতন্ত্র কে প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর: মুসোলিনি
২৯) প্রশ্ন: জার্মানিতে নাৎসি দলের একনায়কতন্ত্র কে প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর: হিটলার
৩০) প্রশ্ন: স্পেনে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কে করেছিলেন?
উত্তর: জেনারেল ফ্রাঙ্কো
৩১) প্রশ্ন: জাতিসংঘ কত খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয়েছিল?
উত্তর: 1919 খ্রিস্টাব্দে
৩২) প্রশ্ন: স্পেনের গৃহযুদ্ধ কত সালে হয়েছিল?
উত্তর: 1939 খ্রিস্টাব্দে
প্রশ্নের মান ২,৪ / Mark 2,4
১) প্রশ্ন: রাশিয়ায় 'জারতন্ত্র' বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: ১৬১৩ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার মিখাইল রোমানভের প্রতিষ্ঠিত রাজবংশ রোমানভ রাজবংশ নামে পরিচিত। এই বংশের রাজারা 'জার' উপাধিতে ভূষিত হতো বলে এই বংশের শাসনকাল 'জারতন্ত্র' নামে পরিচিত। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ায় জারতন্ত্রের পতন ঘটে।
২) প্রশ্ন: 'মুক্তিদাতা জার' কাকে, কেন বলা হয়?
উত্তর: দ্বিতীয় আলেকজান্ডার কে 'মুক্তিদাতা জার' বলা হয়। এর কারণগুলি আলোচনা করা হলো-
ভূমিদাস প্রথার অবসান ঘটায়।
ভূমিদাসদের মুক্তি প্রদান হয় ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে।
ভূমিদাসরা স্বাধীন নাগরিকের মর্যাদা লাভ করে।
ভূমি দাসদের বেচাকেনা ও আরো অন্যান্য বিষয় বন্ধ হয়ে যায় বলে লক্ষ্য করা যায়।
৩) প্রশ্ন: 'মির' কী?
উত্তর: রাশিয়ার গ্রামীণ সমবায় সমিতি ছিল যা 'মির' নামে পরিচিত। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে ভূমিদাস প্রথার অবসান ঘটান। এবং পরবর্তীকালে 'মির' নামক সমবায় সমিতির ওপর মুক্ত কৃষকদের ভূমির সমস্ত দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। জানা যায় 'মির' কর্তৃক মুক্ত ভুমিদাসরা শোষিত ও অত্যাচারিত হতো।
৪) প্রশ্ন: 'নারদনিক আন্দোলন' কী
উত্তর: রুশ জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের শাসনকালে গড়ে ওঠা জনগণের আন্দোলনকে বলা হয় নারদনিক আন্দোলন। এই আন্দোলন প্রথমত রাশিয়ার কৃষকদের অবস্থার উন্নতির জন্য বুদ্ধিজীবী ছাত্র ও যুবকদের দ্বারা ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়েছিল। এই আন্দোলনের একটি পর্বে রুশ জারকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করা হলে সরকারের দমননীতির কারণে এই আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছিল।
৫) প্রশ্ন: ডুমা কী?
উত্তর: ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম রুশ বিপ্লবে ভয় পেয়ে জার দ্বিতীয় নিকোলাস নির্বাচনের মাধ্যমে আইন পরিষদ বা ডুমা গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। রাশিয়ার জাতীয় পরিষদ 'ডুমা' (DUMA) নামে পরিচিত। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ডুমার অধিবেশন বসেছিলো।
৬) প্রশ্ন: 'পেট্রোগ্রাড' ধর্মঘট' কি?
উত্তর: ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ৪ মার্চ জার দ্বিতীয় নিকলাসের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে রাশিয়ায় পেট্রোগ্রাড শহরে বলশেভিকদের শ্রমিকরা যে ধর্মঘট করেছিল তা 'পেট্রোগ্রাড ধর্মঘট' নামে পরিচিত। এই ধর্মঘটে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার শ্রমিক যোগদান করেছিলেন। শ্রমিক ও কৃষকদের মজুরি বৃদ্ধি এবং খাদ্যের দাবিতে এই ধর্মঘট হয়েছিল।
৭) প্রশ্ন: মার্চ বিপ্লব কাকে বলে?
উত্তর: ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে শ্রমিক ধর্মঘট, সরকারি অস্ত্রাগার লুঠ ও বিচারালয়গুলিতে আগুন ধরানো প্রভৃতি ঘটনার মাধ্যমে বিপ্লবীরা রাজধানী পেট্রোগ্রাড শহর দখল করে নেয়। এর ফলে রুশ জার দ্বিতীয় নিকোলাস বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেন এবং রাশিয়ার বুর্জোয়া নেতা প্রিন্স জর্জ লুভভ-এর নেতৃত্বে একটি স্থায়ী প্রজাতান্ত্রিক সরকার গঠিত হয়। এইভাবে রাশিয়াতে রোমানভ বংশের পতন ঘটে বলে ঘটনাটি 'মার্চ বিপ্লব' নামে পরিচিত।
৮) প্রশ্ন: কেরেনস্কি কে ছিলেন?
উত্তর: কেরেনস্কি ছিলেন রাশিয়ার মেনশেভিক দলের নেতা। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের মার্চে জারতন্ত্রের অবসান ঘটলে যে অস্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় তাতে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। তবে ওই বছরের নভেম্বর মাসে বলশেভিকরা ক্ষমতা দখল করলে তিনি আমেরিকায় পালিয়ে যান।
৯) প্রশ্ন: এপ্রিল থিসিস কি?
উত্তর: ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই এপ্রিল লেনিন তাঁর নিজস্ব চিন্তাধারা এবং যে বিখ্যাত কর্মধারা প্রকাশ করেন তা 'এপ্রিল থিসিস' নামে পরিচিত। লেনিন এতে বলেন-
বলশেভিকরাই জারতন্ত্রের পতন ঘটিয়েছিলেন এবং শাসনক্ষমতা তাদেরই প্রাপ্য।
কৃষক, শ্রমিকশ্রেণী সহ সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
১০) প্রশ্ন: ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর বিপ্লব বা রুশ বিপ্লব বা বলশেভিক বিপ্লবের গুরুত্ব বা ফলাফল কি ছিল?
উত্তর: ১৯১৭ সালের নভেম্বর মাসে রাশিয়ায় যে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল তা নভেম্বর বিপ্লব বা রুশ বিপ্লব নামে পরিচিত। এই বিপ্লবের গুরুত্ব বা ফলাফল গুলি হল-
রাশিয়ার রোমানভ বংশের পতন ঘটিয়ে সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
পুনরায় রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্গত অ-রুশ জাতিগুলি সমমর্যাদা ও সমান অধিকার লাভ করে
রাশিয়াতে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সাম্রাজ্যবাদের প্রসার ঘটে।
১১) প্রশ্ন: রুশ বিপ্লবের সামাজিক প্রভাব কি ছিল?
উত্তর: রুশ বিপ্লবের বেশ কয়েকটি সামাজিক প্রভাব ছিল। সেগুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো-
রাশিয়াতে সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিক কৃষকশ্রেণীর সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো।
রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্গত অ-রুশ জাতিগুলি সমমর্যাদা ও সমান অধিকার লাভ করে।
বিভিন্ন দেশের সাম্যবাদী ও শ্রমিক আন্দোলন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
১২) প্রশ্ন: রাশিয়ার ইতিহাসে ১৯১৭ এর গুরুত্ব কি?
উত্তর: লেনিনের নেতৃত্বে রাশিয়ায় ১৯১৭ সালে বলশেভিক বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। এর দ্বারা রাশিয়ায় জারতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং রাশিয়া বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।
১৩) প্রশ্ন: ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের বলশেভিক বিপ্লবের সাফল্যের কারণগুলি কি ছিল?
উত্তর: ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বলশেভিক বিপ্লব-এর সাফল্যের বিভিন্ন কারণ আলোচনা করা হলো-
বলশেভিক দলের নেতা লেনিনের সুযোগ্য নেতৃত্ব।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার ধারাবাহিক বিপর্যয়।
কেরেনস্কি ব্যবস্থার দুর্বলতা জনসমক্ষে প্রকট হয়ে ওঠা।
তৎকালীন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি।
১৪) প্রশ্ন: কাকে এবং কেনো 'আধুনিক রাশিয়ার জনক' বলা হয়?
উত্তর: পিটার দ্য গ্রেট কে 'আধুনিক রাশিয়ার জনক' বলা হয়। কারণ-
ব্রেসিয়ার উন্নতির জন্য বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজ করে জনগণের কৃতজ্ঞতাভজন হয়েছিলেন।
তিনি রাশিয়ায় সেনাবাহিনীতে বিভিন্ন সংস্কার করেছিলেন।
বৈদেশিক ক্ষেত্রে ও কূটনীতিতে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন।
১৫) প্রশ্ন: রুশীকরণ নীতি বলতে কী বোঝো?
উত্তর: ক্রিমিয়ার যুদ্ধ ও পোল্যান্ড বিদ্রোহের পর রাশিয়ার জাররা ইউরাল এলাকা, পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, ইউক্রেন, ফিনল্যান্ড, বেসারাবিয়া বা মোলডাভা প্রভৃতি এলাকার অ-রুশদের ওপর রুশ ভাষা ও রুশ সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার নীতি নিয়েছিলেন। এই নীতিটিই 'রুশীকরণ নীতি' নামে পরিচিত।
১৬) প্রশ্ন: 'থার্ড সেকশন' কী?
উত্তর: রাশিয়ার গুপ্ত পুলিশবাহিনীকে বলা হত 'থার্ড সেকশন'। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে জার প্রথম নিকোলাস এটি স্থাপন করেন। এই বাহিনীকে বিদ্রোহ ও বিপ্লব দমনে কাজে লাগানো হয়। অবশেষে ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে এটিকে রদ করে রাশিয়াতে পুলিশবাহিনী গঠন করা হয়।
১৭) প্রশ্ন: রক্তাক্ত রবিবার কী?
উত্তর: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২২ জানুয়ারি রবিবার রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে একদল নিরস্ত্র শ্রমিক বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে রাশিয়ার জার দ্বিতীয় নিকোলাসকে একটি স্মারকলিপি দিতে যায়। এই অভিযানে রুশ সেনারা গুলি চালালে শতাধিক আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়। রাশিয়ার ইতিহাসে এই ঘটনা 'রক্তাক্ত রবিবার' বা '১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব' নামে পরিচিত।
১৮) প্রশ্ন: মেনশেভিক ও বলশেভিক কথার অর্থ কী?
উত্তর: রাশিয়ার সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক লেবার পার্টির সংখ্যালঘিষ্ঠ সদস্যরা 'মেনশেভিক' এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা 'বলশেভিক' নামে পরিচিত। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে এই পার্টির সদস্যদের মধ্য 'নীতি ও আদর্শকে' কেন্দ্র করে মত বিরোধ দেখা দেয় ও পাটি ভেঙে দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। লেনিনের অনুগামী সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকায় তারা বলশেভিক এবং মার্টভের অনুগামীরা মেনশেভিক নামে পরিচিত হয়। অবশেষে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে আনুষ্ঠানিকভাবে এই দুই গোষ্ঠী পৃথক রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়।
১৯) প্রশ্ন: ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লবকে 'নভেম্বর বিপ্লব' ও 'বলশেভিক বিপ্লব' বলা হয় কেন?
উত্তর: ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৫-২৬ অক্টোবরের এই বিপ্লবটি যেহেতু বিশ্বের প্রচলিত জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের ৭-৮ নভেম্বর তারিখে হয়েছিল তাই একে 'নভেম্বর বিপ্লব' বলা হয়। এবং যেহেতু বলশেভিক দলের নেতৃত্বে এই বিপ্লব সম্পন্ন হয়েছিল তাই তা 'বলশেভিক বিপ্লব' নামেও পরিচিত হয়।
২০) প্রশ্ন: শান্তি-রুটি-জমি শ্লোগান কী?
উত্তর: রুশ বিপ্লবের পূর্বে লেনিন ঘোষণা করেন যে, বলশেভিকরা ক্ষমতা লাভ করলে-
সৈন্যরা পাবে শান্তি;
শ্রমিকরা পাবে রুটি;
এবং কৃষকরা পাবে জমি।
লেনিনের এই শ্লোগান রাশিয়ায় বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
২১) প্রশ্ন: কবে, কোন প্রত্যক্ষ কারণে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়? অথবা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-এর প্রত্যক্ষ কারণ কি ছিল? / সেরাজোভো হত্যাকান্ড কী?
উত্তর: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে। অস্ট্রিয়া এবং সার্বিয়ার যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে এই যুদ্ধের সূচনা হয়। এই যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ ছিল- অস্ট্রিয়ার যুবরাজ ও তার পত্নী সোফিয়া বসনিয়ার রাজধানী সেরাজেভো শহরে বেড়াতে এলে ব্ল্যাক হ্যান্ড দলের সদস্য এক স্লাভ আততায়ীর হাতে নিহত হন। এই ঘটনা 'সেরাজোভো হত্যাকান্ড' নামে পরিচিত
২২) প্রশ্ন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কাদের মধ্যে হয়েছিল?
উত্তর: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার আগে ইউরোেপ দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছিল। এই শক্তিজোটগুলি হলো-
এক পক্ষে ছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন, জাপান ইত্যাদি মিত্রশক্তি নামে পরিচিত ছিল।
অপরপক্ষে অস্ট্রিয়া, ইতালি, তুরস্ক বুলগেরিয়া যা 'অক্ষশক্তি' নামে পরিচিত। যদিও ইতালি পরে অক্ষশক্তি ত্যাগ করে মিত্রশক্তিতে যোগদান করেছিল।
২৩) প্রশ্ন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে কেন সর্বাত্মক যুদ্ধ বলা হয়?
উত্তর: প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে সর্বাত্মক যুদ্ধ বলা হয়। এর কারণগুলি হলো-
চার বছর স্থায়ী এই যুদ্ধ সামরিক বাহিনীর সেনার পাশাপাশি অসামরিক বাহিনীও এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল।
ইউরোপ ছাড়িয়ে এই যুদ্ধ জলে, স্থলে ও আকাশে বিস্তার লাভ করে সর্বব্যাপী যুদ্ধে পরিণত হয়েছিলো।
এই যুদ্ধ ছিল সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক এবং ব্যয়বহুল।
২৪) প্রশ্ন: প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে বৃহৎ চতুঃশক্তি বা Big Four নামে কারা পরিচিত হয়েছিল?
উত্তর: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছিল ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে। প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে বিজয়ী মিত্রশক্তির প্রতিনিধিরা যোগ দিলেও সর্বোচ্চ ক্ষমতা ছিল মোট চারটি দেশের হাতে। তারা হল- উড্রো উইলসন (মার্কিন রাষ্ট্রপতি), লয়েড জর্জ (ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী), ক্লিমেশো (ইতালির প্রধানমন্ত্রী) এবং অ্যান্ডো (ফরাসি প্রধানমন্ত্রী) প্রমুখ। এঁরাই বৃহৎ চতুঃশক্তি বা Big Four নামে পরিচিত ছিল।
২৫) প্রশ্ন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কয়েকটি ফলাফল লেখ। উত্তর: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলাফলগুলি ছিল-
প্রচুর সংখ্যক সেনা ও মানুষ মারা যায় এবং অনেকে আহত হয়।
বিশ্বের প্রতিটি দেশ কোনো না কোনোভাবে ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছিল।
অনেক কলকারখানা, শহর, গ্রাম, বন্দর ধ্বংস হয়ে যায়।
জনগনের আর্থিক দুর্দশা ও বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পায়।
ইউরোপে বেশ কয়েকটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে ওঠে।
২৬) প্রশ্ন: ভার্সাই সন্ধির উদ্দেশ্য এবং দুটি সামরিক শর্ত লেখ?
উত্তর: বেশ কয়েকটি শর্ত ছিল ভার্সাই সন্ধির। এই সন্ধির উদ্দেশ্য ছিল জার্মানিকে সামরিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সমস্ত দিক থেকে দুর্বল করে দেওয়া। জার্মানির সামরিক শক্তিকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য এই সন্ধিতে বলা হয়-
জার্মানির সেনাবাহিনী ভেঙ্গে সৈন্য সংখ্যা ১ লক্ষ করে দেওয়া হয়।
জার্মানির যুদ্ধজাহাজগুলি ব্রিটেনকে দিয়ে দেওয়া হয়।
২৭) প্রশ্ন: ভার্সাই সন্ধিকে 'আরোপিত সন্ধি' বা 'জবরদস্তি মূলক সন্ধি' বলা হয় কেন?
উত্তর: ভার্সাই সন্ধিকে 'আরোপিত সন্ধি' বা 'জবরদস্তিমূলক সন্ধি' বলা হয়। এর কারণগুলি হলো-
যুদ্ধে বিজয়ী মিত্রপক্ষ পরাজিত জার্মানির উপর জোর করে ভার্সাই-এর সন্ধি চাপিয়ে দেয়, যাতে পুনরায় জার্মানি শক্তি সঞ্চয় করতে না পারে।
এই সন্ধি ছিল জার্মানির কাছে অত্যন্ত অপমানজনক। জার্মান প্রতিনিধিদের আপত্তি অগ্রাহ্য করে জোর করে এই চুক্তিতে তাদের স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়।
২৮) প্রশ্ন: কেন 'চোদ্দদফা নীতি' ঘোষিত হয়?
উত্তর: উড্রো উইলসন প্রথম চোদ্দদফা ঘোষণা করেন। উড্রো উইলসন ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি। ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ জানুয়ারি চোদ্দদফা নীতিটি ঘোষিত হয়েছিল। এই চোদ্দদফা নীতিগুলির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল-
বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।
গণতন্ত্র রক্ষা করা।
ন্যায় ও নিরাপত্তার ভিত্তিতে আইনসম্মত শাসন স্থাপন করা।
একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।
২৯) প্রশ্ন: জাতিসংঘ কখন গঠিত হয়?
উত্তর: উড্রো উইলসন তাঁর চোদ্দদফা নীতিতে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রয়োজন অনুভূত হয়। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ২৮ এপ্রিল জাতিসংঘের চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয় ও জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে জাতিসংঘের প্রথম অধিবেশন হয় ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি।
৩০) প্রশ্ন: জাতিসংঘ কেন গঠিত হয়? / জাতিসংঘের উদ্দেশ্য লেখো।
উত্তর: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯১৯ খ্রি. জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘের উদ্দেশ্য ছিল-
আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায়;
ন্যায় ও সততার ভিত্তিতে পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
৩১) প্রশ্ন: জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলি কারা ছিল?
উত্তর: জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার সময় এই পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র ছিল-১. ইংল্যান্ড, ২. ফ্রান্স, ৩. ইতালি, ৪. জাপান। অবশেষে পরবর্তীকালে ৫. রাশিয়া এবং ৬. জার্মানি স্থায়ী সদস্য পদ গ্রহণ করে।
৩২) প্রশ্ন: জাতিসংঘ কেন ব্যর্থ হয়েছিল?
উত্তর: জাতিসংঘ ব্যর্থতার বিভিন্ন কারণ ছিল। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার মহৎ আদর্শ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘের ব্যর্থতার কারণগুলি আলোচনা করা হলো-
জাতিসংঘের নিজস্ব কোনো সেনাবাহিনী ছিল না।
জাতিসংঘের সংগঠনিক দুর্বলতার পাশাপাশি অতীত অভিজ্ঞতা না থাকা।
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মহামন্দা।
জার্মানি ও ইতালির প্রতি ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের তোষণ নীতি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা।
৩৩) প্রশ্ন: ভাইমার প্রজাতন্ত্র কী?
উত্তর: প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর রাজতন্ত্রের অবসান ঘটলে জার্মানির বিশিষ্ট সমাজতান্ত্রিক নেতা ফ্রেডরিক ইবার্ট এর নেতৃত্বে সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান দল একটি অস্থায়ী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। বার্লিনের কাছে ভাইমার নামক স্থানে এই অস্থায়ী প্রজাতান্ত্রিক সরকারের কর্মকেন্দ্র প্রতিষ্টিত হয় বলে এই প্রজাতন্ত্র ভাইমার প্রজাতন্ত্র নামে পরিচিত। এই প্রজাতন্ত্রটি টিকেছিল ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। জার্মানিতে হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসিবাদী সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে এই প্রজাতন্ত্রের পতন ঘটে।
৩৪) প্রশ্ন: ভাইমার প্রজাতন্ত্র কেন ব্যর্থ হয়েছিল?
উত্তর: ভাইমার প্রজাতন্ত্র ব্যর্থতার বিভিন্ন কারণ ছিল-
প্রতিষ্ঠা কাল থেকেই এই প্রজাতন্ত্র জনপ্রিয় ছিল না।
ভাইমার প্রজাতন্ত্রের আসীন সরকারগুলি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসিদলের উত্থান ও ক্ষমতা দখলের ঘটনা এই প্রজাতন্ত্রের পতন নিশ্চিত করেছিল।
৩৫) প্রশ্ন: অর্থনৈতিক মহামন্দা বলতে কি বোঝো?
উত্তর: ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রপতি হুভারের শাসনকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে প্রথমে শেয়ার বাজারে ধ্বস নামে ও পরে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিপর্যয় নেমে আসে। এর ফলে ক্রয়-বিক্রয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে মন্দা দেখা দেয় তা অর্থনৈতিক মহামন্দা নামে পরিচিত। মহামন্দা চলেছিল প্রায় এক দশক।
৩৬) প্রশ্ন: মুসোলিনি কে?
উত্তর: মুসোলিনি ছিলেন ইতালির ফ্যাসিস্ট দলের নেতা। ১৯২২ সালে ইতালির মন্ত্রী হয়ে মুসোলিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী (ইল ডুচে) হয়েছিলেন।
৩৭) প্রশ্ন: হিটলার কে?
উত্তর: হিটলার ছিলেন জার্মানির নাৎসিদলের নেতা এবং জার্মানির চ্যান্সেলর (১৯৩৩)। পরে জার্মানির রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেন।
৩৮) প্রশ্ন: ফ্যুয়েরার ও ইল ডুচে কারা?
উত্তর: হিটলার জার্মানির সর্বময় ক্ষমতা দখল করে 'ফ্যুয়েরার' বলে খ্যাত হয়েছিলেন। 'ফ্যুয়েরার' কথার অর্থ সর্বোচ্চ শাসক। মুসোলনি ইতালির সর্বময় ক্ষমতা দখলের পর 'ইল ডুচে' বলে খ্যাত হন।
৩৯) প্রশ্ন: ফ্যাসিবাদ কী?
উত্তর: ফ্যাসিবাদ হল ইতালিতে মুসোলিনি নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার ও তার উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক মতবাদ। মুসোলিনির নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট দল ইতালির রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে আগ্রাসী, জাতিবিদ্বেষী, উগ্র জাতীয়তাবাদী ও একনায়কতন্ত্রী শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করে যা ফ্যাসিবাদ নামে পরিচিত।
৪০) প্রশ্ন: ফ্যাসিস্ট দল কে, কেন প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর: ইতালিতে ফ্যাসিস্ট দল প্রতিষ্ঠা করেন বেনিতো মুসোলিনি। ফ্যাসিস্ট দলের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল-
কমিউনিস্টদের ধ্বংস সাধন করা।
সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইতালির হারানো মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা এবং
রাষ্ট্রের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য শক্তিশালী পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করা।
৪১) প্রশ্ন: নাৎসিবাদ কী?
উত্তর: হিটলারের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক মতবাদ হলো নাৎসিবাদ। জার্মানিতে প্রতিষ্ঠিত নাৎসি দল ক্ষমতায় এলে জার্মানিতে এই মতবাদ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই মতবাদ ফ্যাসিবাদের মতোই আগ্রাসী, জাতিবিদ্বেষী, একনায়কতন্ত্রী রাজনৈতিক মতাদর্শ। হিটলারের লেখা 'মেইন ক্যাম্ফ' হল নাৎসিবাদের বাইবেল।
৪২) প্রশ্ন: নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখ?
উত্তর: নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিভিন্ন পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়-
নাৎসিবাদ ফ্যাসিবাদের তুলনায় বেশি ভয়ংকর ও উগ্র হলেও নাৎসিবাদ যতটা ইহুদি বিদ্বেষী ছিল ফ্যাসিবাদ ততটা ছিল না।
ফ্যাসিবাদ ইতালির অর্থনীতিকে মজবুত করতে পারেনি এবং বেকার সমস্যার মতো বিভিন্ন সমস্যা থেকে গিয়েছিল। কিন্তু নাৎসিবাদ জার্মানিতে এই সকল বিষয়ে সাফল্য অর্জন করতে সফল হয়েছিল।
৪৩) প্রশ্ন: ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদের মধ্যে দুটি সাদৃশ্য উল্লেখ করো?
উত্তর: ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদের মধ্য বিভিন্ন সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়—
রাজনৈতিক সাদৃশ্য: গণতন্ত্রের পরিবর্তে একদলীয় এক নায়কতন্ত্রী শাসন লক্ষ করা যায়। দলের একচেটিয়া প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার জন্য বাক্-স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রাষ্ট্র কর্তৃক কেড়ে নেওয়া হয়।
অর্থনৈতিক সাদৃশ্য: উভয় মতাদর্শেই অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে কেন্দ্রীভূত করার উপর জোর দেওয়া হয়।
৪৪) প্রশ্ন: গণতন্ত্রের সঙ্গে ফ্যাসিবাদের পার্থক্য লেখ?
উত্তর: গণতন্ত্রের সঙ্গে ফ্যাসিবাদের বিভিন্ন পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়-
গণতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ দুটি সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী রাজনৈতিক মতবাদ।
জনগণের মতের উপর প্রতিষ্ঠিত শাসনব্যবস্থা হল গণতন্ত্র।
গণতন্ত্রে বিরোধীদল মর্যাদাপূর্ণ মত প্রকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।
অপরদিকে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থায় বিরোধী দলের কোন ভূমিকা নেই বলে জানা যায়।
৪৫) প্রশ্ন: হিটলারের উৎখানের কারণ লেখ। অথবা, জার্মানিতে নাৎসি দলের জনপ্রিয়তার কারণ কি ছিল?
উত্তর: হিটলারের উত্থানের বিভিন্ন কারণ ছিল। জার্মানিতে হিটলারের উত্থান ও নাৎসি দলের জনপ্রিয়তা ছিল। এর কারণগুলি নিম্নে আলোচিত হলো-
অপমানজনক ভার্সাই চুক্তির বিরুদ্ধে নাৎসি দলের প্রচার।
জার্মানির বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে ভাইমার প্রজাতন্ত্রের ব্যর্থতা।
জার্মানির আর্থ-সামাজিক সংকট, বেকারত্ব, খাদ্যাভাবের পরিপ্রেক্ষিতে নাৎসিদলের ইতিবাচক প্রচার।
হিটলারের ব্যক্তিত্ব দ্বারা জার্মানবাসীর মনে আসার সঞ্চার।
জার্মানিতে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে হিটলারের প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে হিটলারের ক্ষমতায় উত্থান সম্ভব হয়।
৪৬) প্রশ্ন: হেরেনভক তত্ত্ব কী?
উত্তর: হিটলার মনে করতেন, জার্মানরাই একমাত্র বিশুদ্ধ আর্যজাতির রক্তের অধিকারী ও বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতি। একারণেই জার্মান জাতি অন্যান্য জাতির উপর আধিপত্য স্থাপনের অধিকারী। তাঁর এই তত্ত্বই 'হেরেনভক তত্ত্ব' নামে পরিচিত।
৪৭) প্রশ্ন: 'মেইন ক্যাম্প' গ্রন্থটি কার রচনা? এটি কেন বিখ্যাত?
উত্তর: মেইন ক্যাম্ফ (১৯২৫) একটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ। এই গ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন জার্মানির নাৎসি নেতা হিটলার। এই গ্রন্থে হিটলারের রাজনৈতিক চিন্তাধারা ও কর্মসূচির পরিচয় পাওয়া যায় বলে এই গ্রন্থটি 'নাৎসিবাদের বাইবেল' নামে পরিচিত।
৪৮) প্রশ্ন: স্পেনের গৃহযুদ্ধ কী?
উত্তর: ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের দুর্বল প্রজাতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর নেতৃত্বে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সূচনা হয় তা 'স্পেনের গৃহযুদ্ধ' নামে খ্যাত। দীর্ঘদিন এই গৃহযুদ্ধ চলার পর ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি ও ইতালির সাহায্য পুষ্ট হয়ে জেনারেল ফ্রাঙ্কো স্পেনের প্রজাতন্ত্রের উচ্ছেদ ঘটিয়ে সে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন।
৪৯) প্রশ্ন: জেনারেল ফ্রাঙ্কো কে ছিলেন?
উত্তর: জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো ছিলেন ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্পেনের গৃহযুদ্ধের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতা। তিনি এই গৃহযুদ্ধে জয়লাভ করেন এবং স্পেনের রাষ্ট্রনায়ক বা 'কডিলো'-তে পরিণত হন। তাঁর সময়ের স্পেনকে 'ফ্রাঙ্কোবাদী স্পেন' বলা হত।
৫০) প্রশ্ন: 'হুভার মোরাটোরিয়াম' বলতে কী বোঝো?
উত্তর: ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অর্থনৈতিক মহামন্দার প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হুভার ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে ঘোষণা করেন যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন যুদ্ধঋণ ও অন্যান্য ঋণ বাবদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আগামী এক বছর পরিশোধ করতে হবে না। এই ঘোষণা 'হুভার মোরাটোরিয়াম' বা 'হুভার স্থগিতকরণ' নামে পরিচিত।
৫১) প্রশ্ন: 'কালো বৃহস্পতিবার' ও 'কালো মঙ্গলবার' কী?
উত্তর: ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট শেয়ার মার্কেটে ধস নামে এবং তা পরবর্তী মঙ্গলবার ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এর ফলে নিউইয়ার্কের স্টক এক্সচেঞ্জ মার্কেট বিপর্যস্ত হয়ে যায় ও অর্থনৈতিক মহামন্দার সূচনা হয়। তাই নেতিবাচক অর্থে ওই দু'দিনকে যথাক্রমে 'কালো বৃহস্পতিবার' ও 'কালো মঙ্গলবার' বলা হয়।
৫২) প্রশ্ন: মহামন্দার অবসান কিভাবে ঘটে?
উত্তর: এফ ডি রুজভেল্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সামাজিক উন্নতির জন্য ব্যাপক সংস্কারমূলক ব্যবস্থা বা 'নিউ ডিল' কর্মসূচি গ্রহণ করেন। মার্কিন অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন ঘটে ও শিল্প-বাণিজ্যের উন্নতি শুরু হয়। মার্কিন অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন ঘটলে মহামন্দারও অবসান ঘটে।
৫৩) প্রশ্ন: স্পেনের গৃহযুদ্ধ সম্পর্কে ভারতীয়দের দৃষ্টিভঙ্গি কী ছিল?
উত্তর: একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে ভারতের প্রগতিশীল চিন্তাভাবনার সূচনা হয়। যথা-
ভারতীয় সমাজতন্ত্রী নেতা মানবেন্দ্রনাথ রায় স্পেনের একনায়কতন্ত্রের সমালোচনা করেন।
মহত্মা গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্পেনে গণতন্ত্র ও মানবতার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন।
প্রশ্নের মান ৪,৮ / Mark 4,8
১) প্রশ্ন: রুশ বিপ্লব বা বলশেভিক বিপ্লব বা নভেম্বর বিপ্লবের কারণ আলোচনা করো।
উত্তর: রুশ বিপ্লবের কারণ: ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের কারণগুলি নিন্মে আলোচনা করা হল –
(১) জারের স্বৈরাচার: রাশিয়ার সম্রাটকে জার্ বলা হতো। জাররা রাশিয়ায় স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছিল। স্বৈরাচারী জার শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে রুশরা এই বিপ্লবে যোগ দেয়।
(২) কৃষকদের অসন্তোষ: রাশিয়ার জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদ প্রাথমিকভাবে ঘটালেও রুশ কৃষকদের অবস্থার সেরকম উন্নতি ঘটেনি। কৃষকরা তাদের এই চরম দুরবস্থা থেকে রেহাই পাওয়ার আশায় বিপ্লবের পথ বেছে নেয়।
(৩) শ্রমিকদের অসন্তোষ: অধিক মুনাফার লোভে শিল্পকারখানাগুলির মালিকরা বিভিন্নভাবে শ্রমিকদের শোষণ করত। কম মজুরিতে দীর্ঘ সময় কাজ, অনাহার, অর্থাভাব, বস্তিজীবনের দুরাবস্থা শ্রমিকদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। ফলে রাশিয়ার শ্রমিকশ্রেণির মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয় এবং তারা বিপ্লবের পথ বেছে নেয়।
(৪) বলশেভিক দলের প্রভাব: লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক দল জারতন্ত্রের অবসানের জন্য বিপ্লবের ডাক দেয়। বলশেভিক দল তাদের দলীয় পত্রিকা প্রাভদা'র মাধ্যমে বিপ্লবের প্রচার চালায় এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
(৫) দার্শনিকদের প্রভাব: টলস্টয়, চেখভ প্রমুখ দার্শনিক ও সাহিত্যিকরা তাঁদের রচনায় জারতন্ত্রের স্বৈরাচার ও রাশিয়ার অবস্থা তুলে ধরেন। এইসব রচনা দ্বারা রাশিয়ার জনগণ প্রভাবিত হয় এবং বঞ্চনা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে বিপ্লবের পথ বেছে নেয়
মূল্যায়ন: লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিকরা ১৯১৭ সালের নভেম্বর মাসে রাশিয়ার শাসনক্ষমতা দখল করে এবং রাশিয়া বিশ্বে প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
২) প্রশ্ন: ইতালিতে ফ্যাসিবাদী শক্তির উত্থান কিভাবে হয়েছিল?
উত্তর: ইতালিতে মুসোলিনির নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট দলের ক্ষমতা দখলের প্রেক্ষাপট গুলি হল –
(১) অর্থনৈতিক দুর্দশাঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালির দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, খাদ্যাভাব, বেকারত্ব, বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি প্রতিরোধে সরকার ব্যর্থ হলে ইতালিবাসীদের ক্ষোভ চরমে উঠে।
(২) ভার্সাই সন্ধির ত্রুটিঃ মিত্রপক্ষের সঙ্গে যুদ্ধে যোগদান কারী ইতালি যুদ্ধের পর ভার্সাই সন্ধির দ্বারা আলবেনিয়া, ফউম বন্দর, আফ্রিকার উপনিবেশ প্রভৃতি লাভে ব্যর্থ হয়। ফলে ক্ষুব্ধ ইতালিবাসি সে দেশের প্রচলিত সরকারের যোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে।
(৩) ফ্যাসিস্ট দল গঠনঃ মুসোলিনি ইতালীর মিলান শহরে 1919 খ্রিস্টাব্দে বেকার সৈনিক ও দেশপ্রেমিকদের এক সমাবেশের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট দল প্রতিষ্ঠা করেন।
(৪) মুসোলিনির প্রচারঃ মুসোলিনি প্রচার করেন যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইতালি মিত্রপক্ষের সঙ্গে যুদ্ধ করা সত্ত্বেও যুদ্ধের পর ভার্সাই সন্ধিতে ইতালিকে তার প্রাপ্য স্থানগুলি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তার প্রচার ইতালির সেনা অফিসার ও বেকার যুবকদের উদ্দীপ্ত করে।
(৫) ক্ষমতা দখলঃ মুসোলিনির রোম অভিযানের ফলে রোমের ফ্যাক্টা মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করেন। রাজা তৃতীয় ভিক্টর ইমানুয়েল তাকে মন্ত্রিসভা গঠনের আহ্বান জানালে তার নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট দল ইতালির ক্ষমতা দখল করে।
৩) প্রশ্ন: জার্মানিতে হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি দলের উত্থানের পটভূমি আলোচনা করো।
উত্তর: জার্মানিতে হিটলার ও নাৎসি দলের ক্ষমতা লাভ কোন চমকপ্রদ, আকস্মিক বৈপ্লবিক ঘটনা ছিল না। হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি দলের ক্ষমতা দখলের প্রেক্ষাপটগুলি হলো-
(১) ভার্সাই সন্ধির ভূমিকাঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মিত্র শক্তি জার্মানির উপর অন্যায় ও বৈষম্যমূলক শাসন চাপিয়ে দিলে জার্মানবাসী ক্ষুব্ধ হয়।
(২) অর্থনৈতিক সংকটঃ যুদ্ধপরবর্তী জার্মানিতে প্রবল অর্থনৈতিক সংকট, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, খাদ্যাভাব প্রভৃতি জটিল আকার ধারণ করে। এই অবস্থায় হিটলার জার্মানবাসীকে সুদিনের স্বপ্ন দেখিয়ে প্রচার চালান।
(৩) ইহুদি বিদ্বেষঃ জার্মানির সংখ্যালঘু ইহুদিরা ধনী, উচ্চ শিক্ষিত ও উচ্চ পদে চাকরি করায় সাধারন মানুষ ইহুদিদের হিংসা করত। এই সুযোগে হিটলার ইহুদীদের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে জার্মানবাসীর মন জয় করেন।
(৪) হিটলারের ব্যক্তিত্বঃ হিটলারের চমকপ্রদ ব্যক্তিত্ব, অসাধারণ কর্মদক্ষতা, সাংগঠনিক শক্তি ও আবেগপ্রবণ বক্তৃতা নাৎসি দলের ক্ষমতা দখলে সহায়তা করে।
(৫) রাজনৈতিক অস্থিরতাঃ ভার্সাই সন্ধির পরবর্তীকালে জার্মানিতে প্রবল রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা যায়। 1919 – 1933 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সে দেশে 21 টি মন্ত্রিসভা ক্ষমতা দখল করে।
৪) প্রশ্ন: স্পেনের গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপট ও ফলাফল আলোচনা করো।
উত্তর:
স্পেনের গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর স্পেনের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় সামরিক শাসক প্রাইমো-ডি-রিভেরো স্পেনে একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করলে বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্পেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। নিন্মে স্পেনের গৃহযুদ্ধের কারণ গুলি আলোচনা করা হল -
(১) পপুলার ফ্রন্ট গঠনঃ ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে স্পেনে পপুলার ফ্রন্ট নামে জোট সরকার প্রতিষ্ঠা হয়। কিন্তু দক্ষিণপন্থীরা এই সরকারের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধাতে শুরু করে।
(২) সামরিক বিক্ষোভের ক্ষোভঃ দেশে বিশৃঙ্খলা চলাকালীন সরকার বেশ কিছু সামরিক কর্মচারীকে বরখাস্ত, বদলি এবং অবসর গ্রহণে বাধ্য করে। সামরিক কর্মচারী জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো-কে সরকার ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে নির্বাসনে পাঠালে সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক বিভাগে প্রবল ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
(৩) বিদ্রোহঃ বিভিন্ন দক্ষিণপন্থী দল, জমিদার, বুর্জোয়া, যাজকরা ক্ষুব্ধ সামরিক বাহিনীকে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সমর্থন করেছিল। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে মরক্কোয় অবস্থানকারী স্পেনীয় সেনাদল বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিতে জেনারেল ফ্রাঙ্কো নির্বাসন ত্যাগ করে মরক্কোয় উপস্থিত হয়েছিলেন।
(৪) গৃহযুদ্ধ শুরুঃ এই বিদ্রোহে স্পেন সরকারের বিরুদ্ধে প্রজাতন্ত্রী, সমাজতন্ত্রী এবং কমিউনিস্টরা সরকারকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু ফ্যালানজিস্ট, কার্লিস্ট, ন্যাশনালিস্ট ইত্যাদি দক্ষিণপন্থী দল এবং দেশের শিল্পপতি, ভূস্বামী, যাজকরা জেনারেল ফ্রাঙ্কোকে সমর্থন করেছিল। এরফলে স্পেনে এই দুই পক্ষের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধ ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চলেছিল।
ফলাফলঃ স্পেনের গৃহযুদ্ধের ফলাফল গুলো নিচে আলোচনা করা হল-
(১) বিশ্বযুদ্ধের মহড়াঃ স্পেনের গৃহযুদ্ধে জেনারেল ফ্রাঙ্কো এর পক্ষে অংশ নিয়ে জার্মানির হিটলার আসন্ন বিশ্বযুদ্ধের আগে তার অস্ত্রশস্ত্র ও বিমান বাহিনীর শক্তি পরীক্ষার সুযোগ পান। তাই এই গৃহযুদ্ধকে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের মহড়া বলা হয়।
(২) হিটলার-মুসোলিনির সুবিধাঃ একনায়ক ফ্রাঙ্কো জার্মানির একনায়ক হিটলার এবং ইতালির একনায়ক মুসোলিনির পক্ষ গ্রহণ করলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে হিটলার-মুসোলিনির শক্তি যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।
(৩) ইঙ্গ-ফরাসি শক্তিঃ স্পেনের গৃহযুদ্ধে নিরপেক্ষ থেকে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের কূটনৈতিক পরাজয় ঘটে। কারণ জার্মানি ও ইতালি এই যুদ্ধে অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজেদের শক্তি যথেষ্ট বৃদ্ধি করে।
(৪) জাতিসংঘের ব্যর্থতাঃ স্পেনের গৃহযুদ্ধে জাতিসংঘ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। ফলে জাতিসঙ্ঘের দুর্বলতা ও ব্যর্থতা প্রকট হয়ে ওঠে।
মূল্যায়নঃ এইযুদ্ধে জার্মানি ও ইতালির যোগদানের ফলে বিশ্বে ইতালি-জার্মানি জোটের প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায় কিন্তু নিরপেক্ষ ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির কূটনৈতিক পরাজয় ঘটে।
৫) প্রশ্ন: বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারন গুলি লেখ।
উত্তর: প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিশাল সৈন্য বাহিনী, সেনাপতিদের দক্ষতা ও যোগ্যতা এবং উন্নত সমরশাস্ত্র থাকা সত্ত্বেও জার্মানি পরাজিত হয়। জার্মানির পরাজয়ের পাশ্চাত্যে কারণগুলি হল –
(১) যুদ্ধ হয়েছিল দুটি জোটের মধ্যে, শুধু জার্মানির সঙ্গে অন্য কোন একটি রাষ্ট্রের নয়। জার্মানির জোটভুক্ত অন্যান্য দেশগুলো তুলনায় দুর্বল হওয়ায় অধিকাংশ দায়িত্ব ছিল জার্মানির, ফলে তাদের পক্ষে মিত্রশক্তির মোকাবেলা করা বেশিদিন সম্ভব হয়নি।
(২) জার্মানির পর্যাপ্ত আধুনিক সমরাস্ত্র থাকলেও ইঙ্গ-ফরাসি জোটের তুলনায় তা ছিল অনেক কম।
(৩) ইঙ্গ-ফরাসি জোটের বিশ্বব্যাপী উপনিবেশ থাকায় সেখান থেকে অর্থ, সৈন ও অন্যান্য উপকরণ সংগ্রহ করে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ করার ক্ষমতা তাদের ছিল। অন্যদিকে অস্ট্রো-জার্মানি জোটের উপনিবেশ থাকলেও তা থেকে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের উপকরণ সংগ্রহ করা সম্ভব ছিল না।
(৪) জার্মানির আত্মরক্ষার জন্য যথেষ্ট জায়গা ছিল না। রাশিয়ার মতো বিশাল ভূমি ভাগ না থাকায় জার্মানির পক্ষে পাশ্চাত্য মুখী যুদ্ধ করা সম্ভব ছিল না।
(৫) কূটনৈতিক ব্যর্থতাও জার্মানির পরাজয়ের অন্যতম কারণ। জার্মানি কূটনীতির দ্বারা মিত্রশক্তির মধ্যে ভাঙন ধরাতে পারেনি, কিন্তু মিত্রশক্তির কূটনীতির ফলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুদিন পরে ইতালি ইঙ্গ-ফরাসি পক্ষে যোগদান করে।